বাংলাদেশ থেকে USA এর দূরত্ব প্রায় ১৩,২১৯ কিলোমিটার, যদি এই দুরুত্বটা কম হতো মানে, সার্ভার লোকেশন USA না হয়ে, আশেপাশে বা বাংলাদেশে হতো তাহলে রেসপন্স টাইম অনেক কম হতো এবং রাউটিং আরো দ্রুত হতো। রেসপন্স টাইম সেকেন্ডের জায়গায় ন্যানো সেকেন্ডে হতো, ওয়েবসাইট স্পিড কয়েকগুণ ফাস্ট হতো।
বর্তমানে হোস্টিং কমিউনিটিগুলোতে BDIX Hosting নিয়ে এক প্রকার হাইপ তৈরি হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই BDIX Hosting নিয়ে চলছে বিভিন্ন রকম আলোচনা, সমালোচনা। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক BDIX কি? বাংলাদেশ ভিত্তিক ডাটার ইন্টারন্যাশনাল রাউটিং দূর করার জন্য প্রায় ৩৫০০ এর মতো Internet Service Provider (ISP) মিলে BDIX প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এই লিস্টে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন (ISP) যোগ দিচ্ছে। BDIX এর পূর্ণরূপ হলো: Bangladesh Internet Exchange
যদি সহজ কথায় বলি: বাংলাদেশ ভিত্তিক ইউজারদের ওয়েবসাইট স্পিড ফাস্ট করার জন্য BDIX Hosting এর জন্ম।
BDIX Hosting কিভাবে কাজ করে?
BDIX HOSTING এর সুবিধা, অসুবিধা
BDIX Hosting এর সুবিধা?
- রাউটিং দ্রুত হয়, রেসপন্স টাইম কম হয়।
- বাংলাদেশ ভিত্তিক অডিয়েন্স টার্গেটে সুবিধা হয়।
- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে Bandwidth Speed ভালো হয়।
- অনান্য সার্ভারের তুলনায় ২০০ গুণ পর্যন্ত স্পিড হয়ে থাকে।
BDIX Hosting এর অসুবিধা?
- বিভিন্ন ফ্রি CDN এ ওয়েবসাইট স্পিড স্লো হয়ে যায়।
- গ্লোবাল অডিয়েন্সের ক্ষেত্রে Bandwidth Speed কম হয়।
- গ্লোবাল অডিয়েন্স এর রেসপন্স টাইম বেড়ে যায়, যার কারণে BDIX সার্ভারে গ্লোবাল অডিয়েন্স নিয়ে কাজ করা উচিত না।
BDIX কেন ব্যবহার করবেন?
আপনার টার্গেটেড অডিয়েন্স যদি বাংলাদেশী হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার BDIX Hosting ব্যবহার করা উচিত, কেননা সাধারণ হোস্টিং এর তুলনায় BDIX Hosting ২০০ গুণ পর্যন্ত গতি সম্পূর্ণ হয়ে থাকে, যা আপনার ওয়েবসাইটকে সুপার ফাস্ট করে তোলে। আমরা জানি ওয়েবসাইট লোড হতে যদি ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে তাহলে ৫৩% ট্রাফিক অন্য সাইটে মুভ করে, তো BDIX Hosting কেন ব্যবহার করবেন এর জন্য একটাই কারণই আমি মনে করি যথেষ্ট, সেটা হচ্ছে ফাস্ট ওয়েবসাইট স্পিড।
কোন ক্ষেত্রে BDIX HOSTING ব্যবহার করা উচিত না?
আপনার ওয়েবসাইটের টার্গেটেড অডিয়েন্স যদি বাংলাদেশী না হয়ে অন্য কোন দেশের হয় অর্থাৎ গ্লোবাল অডিয়েন্স হয় তাহলে BDIX Hosting ব্যবহার করা উচিত না, এ সম্পর্কে আমরা BDIX Hosting এর অসুবিধা পার্টে আলোচনা করেছি।
কমদামি BDIX Hosting এর রহস্য কি?
৫ জিবি BDIX Hosting কেউ দিচ্ছে ১৮০ টাকায় আবার কেউ দিচ্ছে ১৮০০ টাকায় কিন্তু আসলে এর পেছনের রহস্য কি? যে ১৮০ টাকায় সার্ভিস দিচ্ছে সে ভালো অপরদিকে যে ১৮০০ টাকায় সার্ভিস দিচ্ছে সে ডাকাত, হ্যাঁ অধিকাংশ ইউজারের এটাই ধারণা। আপনার ধারণা ভুল না সঠিক সেটা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না, আপনি যেহেতু ক্লিক করে এখানে এসেছেন তার মানে আপনি ভালো মন্দ পার্থক্য করতে আগ্রহী। তাই আমরা জাস্ট কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরেছি যার মাধ্যমে ভালো খারাপের সঠিক পার্থক্য নির্ণয় করতে আপনাকে সহয়তা করবে।
কিভাবে এত কমদামে BDIX Hosting দেয়?
ক্র্যাক লাইসেন্স
হোস্টিং ব্যবসায়ীদের একটি বড় এমাউন্টের খরচ পড়ে যায় WHMCS Licence, WHM/cPanel Licence, Cloud Linux, Litespeed সহ বিভিন্ন Security Software ও Module এর লাইসেন্সের পিছে। আপনি যদি ঠিক মতো যাচাই করেন তাহলে দেখতে পারবেন যারা কমদামে হোস্টিং প্রভাইড করে তারা অধিকাংশই ক্র্যাক লাইসেন্স, নাল থীম ব্যবহার করে থাকে। যেহেতু তাদের এইসব লাইসেন্স কিনতে হচ্ছে না তাই এখানে প্রায় ৫০% খরচ কম হচ্ছে আর যার কারণেই কম দামে হোস্টিং দিতে পারছে। কিন্তু অপরদিকে এইসব ক্র্যাক লাইসেন্স, নাল থীম ব্যবহার করার জন্য ইউজারদের ওয়েবসাইট সিকিউরিটি ইস্যুতে পড়ে যাচ্ছে।
কাস্টমার সাপোর্ট
ম্যক্সিমাম কমদামি হোস্টিং প্রভাইডাররা ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে থাকে, মানে একাই সার্ভার ম্যানেজমেন্ট, একাই ক্লাইন্ট হান্টিং এবং একাই কাস্টমার সাপোর্ট দিয়ে থাকে যার কারণে তাঁদের পক্ষে ২৪/৭ সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়না। কিন্তু হোস্টিং বিজনেসে ২৪/৭ সাপোর্ট একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, কেননা ইউজার কখন কি প্রবলেম ফেস করবে বলা যায়না আর প্রবলেমের সময় যদি ইনস্ট্যান্ট সাপোর্ট না পাওয়া যায় তাহলে ইউজারের জন্য খুবই সমস্যা হয়ে যেতে পারে। যেহেতু তাদের ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট দিতে হচ্ছে না, সাপোর্টের জন্য আলাদা লোক রাখতে হচ্ছে না তাই এখানে তাঁদের প্রায় ৫-৬ জন ইমপ্লোয়ির স্যালারি বেচে যাচ্ছে।
ওভার সেলিং
ওয়েবসাইটের স্পিড স্লো হবার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে ওভার সেলিং সার্ভার। আর ওভারসেলিং কমদামি হোস্টিং প্রভাইডাররা বেশি করে থাকে, কেননা তাঁদের সার্ভার কস্ট তুলতে হয় এবং প্রফিট মার্জিনও ঠিক রাখতে হয়। যেখানে ভালো কোন প্রভাইডার হয়তো একটি সার্ভার রিসোর্স ৫০ ভাগে ভাগ করে ৫০ জনের কাছে সেল করছে, সেখানে কমদামি হোস্টিং প্রভাইডাররা একই রিসোর্স ১০০-২০০ ভাগে ভাগ করে সেল করছে।
লো কনফিগারেশন সার্ভার
কমদামি হোস্টিং প্রভাইডাররা অধিকাংশই কস্ট কাটিং করার জন্য লো কনফিগারেশনের সার্ভার ক্রয় করে থাকে বা অন্য কোন কোম্পানীর অফারে রিসেলার প্ল্যান নিয়ে তা ইউজারদের মাঝে কমদামে বিক্রি করে। এখানে যেহেতু তারা কোয়ালিটির দিকে না তাকিয়ে শুধু কস্ট কাটিং করার জন্য কমদামে সার্ভার ক্রয় করতে পারছে তাই কম দামে সার্ভিসও দিতে পারছে।
কেন কমদামি BDIX Hosting কেনা উচিত না?
ওয়েবসাইট তৈরি করার পেছনে সবারই কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকে। কেউ হয়তো তার প্রোডাক্ট অনলাইনে বিক্রি করার জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করছে, আবার কেউ হয়তো অনলাইন থেকে আর্নিং করার উদ্দেশ্য ওয়েবসাইট তৈরি করছে, বলা যায় একেকটা ওয়েবসাইট যেন এক একটা স্বপ্ন। আর এখানে ওয়েবসাইট গ্রোথ এর পেছনে আপনার ব্যবসার ফিউচার নির্ভর করছে।
আপনাকে যদি প্রশ্ন করি: সামান্য কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য আপনার স্বপ্নকে ঝুঁকিতে ফেলবেন? নিশ্চয় উত্তর হবে কখনোই না। যদি উত্তর না হয়ে থাকে তাহলে কেন ভাই অল্প কিছু টাকা সেভ করার জন্য আপনার ওয়েবসাইটকে ঝুঁকিতে ফেলছেন? এখনো বুঝতে পারছেন না? ওকে, কমদামি হোস্টিং কিনলে কি কি ক্ষতি হতে পারে এই সম্পর্কে আমি ৫ টি পয়েন্ট তুলে ধরছি।
Slow Speed সাইট
খুব সাধারণতই কমদামি হোস্টিং প্রোভাইডাররা প্রফিট মার্জিন ঠিক রাখার জন্য প্রচুর ওভারসেলিং করে থাকে এবং একই সাথে লো কনফিগারেশনের সার্ভার প্রভাইড করে থাকে যা সম্পর্কে উপরে একবার আলোচনা করেছি। এই ওভারসেলিং এর জন্য ওয়েবসাইট স্পিড খুবই স্লো হয়ে থাকে। গুগোলের একটি রিসার্সে দেখা গেছে কোন ওয়েবসাইট লোড হতে যদি ৩ সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে তাহলে ৫৩% ট্রাফিক অন্য সাইটে মুভ করে।
সাপোর্ট সমস্যা
দেখা যায় মার্কেটে যেই কোম্পানীগুলো নতুন এসেছে যাদের কাস্টমার প্রয়োজন তারাই বেশিরভাগ কমদামি হোস্টিং প্রোভাইড করে থাকে, আর এ জন্যই খুব স্বাভাবিকভাবেই মার্কেটে নতুন এসেই তারা ২৪/৭ সাপোর্টের ব্যবস্থা করতে পারে না। যার কারণে আপনার সাইটের কোন প্রবলেম হলে আপনি যে কোন সময় ইনস্ট্যান্ট সাপোর্ট পাবেন না।
হ্যাক হবার সম্ভবনা
ক্র্যাক লাইসেন্স, নাল থীম ব্যবহারকারী হোস্টিং এর তেমন বিশেষ কোন সিকিউরিটি ব্যবস্থা থাকে না। যার কারনে যে কোন মুহূর্তে আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক হয়ে যাবার সম্ভবনা থাকে।
নো এসইও রেজাল্ট
আপনার সাইটে যতই SEO করেন না কেন বা যত প্রফেশনাল এসইও এক্সপার্টকে দিয়েই কাজ করান না কেন, যদি সাইটের স্পিড খারাপ হয় তাহলে এই এসইও কোন কাজেই আসবে না। Google’s 200 Ranking Factors এর একটি বড় রুলস হচ্ছে সাইট স্পিড।
কমদামি BDIX Hosting তাহলে কাদের জন্য?
আপনি যদি একদম বিগেনার হয়ে থাকেন, শেখার জন্য বা টেস্ট করার জন্য হোস্টিং খুঁজে থাকেন এবং একই সাথে আপনার বাজেট যদি খুবই কম হয়ে থাকে তাহলে আপনি কম দামি ক্র্যাক লাইসেন্সধারী হোস্টিং এর দিকে আগাতে পারেন। এছাড়া আপনার ওয়েবসাইট যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয়ে থাকে, যদি ভবিষ্যতে লং টাইম কনটিনিউ করতে না চান তাহলে কমদামি হোস্টিং এর কথা বিবেচনা করতে পারেন।
BDIX হোস্টিং কেনার সময় কোন বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেন?
- আপনার হোস্টিং প্রভাইডার অরিজিনাল লাইসেন্স ব্যবহার করে কিনা চেক করে নিবেন।
- নিউ প্রাইজ আর রিনিউ প্রাইজের মধ্যে পার্থক্য কেমন হবে।
- আপনার হোস্টিং প্রভাইডার ফ্রি ট্রায়েল অফার করছে কিনা চেক করে নিবেন, যদি ট্রায়াল বা ডেমো অফার করে থাকে তাহলে অবশ্যই ট্রায়েল নিয়ে দেখবেন।
- যে প্রভাইডার থেকে হোস্টিং নিচ্ছেন তাদের রিভিউ কেমন, কত দিন যাবত মার্কেটে আছে ইত্যাদি বিষয়ে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন।
- কোন মানিব্যাক গ্যারান্টি আছে কিনা দেখে নিবেন।
- হোস্টিং এর ব্যাকআপ সিস্টেম কেমন জেনে নিবেন।
- সিকিউরিটি সিস্টেম কি কি ব্যবহার করা হয়েছে জিজ্ঞেস করে নিবেন।